বাংলাদেশের সৌন্দর্যের এক অনন্য নিদর্শন হলো ছেড়া দ্বীপ। সেন্ট মার্টিন’স দ্বীপ থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত এই ছোট দ্বীপটি প্রকৃতির নৈসর্গিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত। যাঁরা সাগরের নীল জলরাশির মাঝে নির্জনতা ও শান্তি খুঁজছেন, তাঁদের জন্য ছেড়া দ্বীপ হতে পারে একটি আদর্শ গন্তব্য। পাঠক আজকে আপনাদের সামনে নিয়ে এসেছি, সেন্টমার্টিন থেকে ছেড়া দ্বীপে যাওয়ার উপায় । আপনি যদি পুরো লেখাটি পড়েন তাহলে জানতে পারবেন ছেড়া দ্বীপের সকল তথ্য। তাহলে আর দেরি কেন পড়তে থাকে আমাদের লেখাটি।
সেন্টমার্টিন থেকে ছেড়া দ্বীপে যাওয়ার উপায়:
সেন্টমার্টিন থেকে ছেড়া দ্বীপে যাওয়ার উপায় হলো প্রথমে আপনাকে যেতে হবে সেন্ট মার্টিন’স দ্বীপে। সেন্ট মার্টিন’স দ্বীপে পৌঁছানোর সাধারণ উপায়গুলো হলো:
টেকনাফ থেকে জাহাজ: টেকনাফ থেকে সকালবেলায় বিভিন্ন জাহাজ, যেমন কেয়ারি সিন্দবাদ, শাহ পরীর দ্বীপ এক্সপ্রেস, সেন্ট মার্টিন’স ক্রুজ সার্ভিস সেন্ট মার্টিন’স দ্বীপে যাতায়াত করে।
স্পিডবোট বা ট্রলার: সেন্ট মার্টিন’স দ্বীপ থেকে ছেড়া দ্বীপে পৌঁছানোর জন্য স্পিডবোট বা ট্রলার ব্যবহার করা হয়।
ছেড়া দ্বীপে ভ্রমণের সঠিক সময়:
ছেড়া দ্বীপ ভ্রমণের জন্য সেরা সময় হলো শীতকাল (অক্টোবর থেকে মার্চ)। এই সময় সমুদ্র শান্ত থাকে এবং আবহাওয়াও ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত। বর্ষাকালে সমুদ্র উত্তাল থাকে, যা ভ্রমণকে ঝুঁকিপূর্ণ করতে পারে।
ছেড়া দ্বীপের প্রধান আকর্ষণ:
ছেড়া দ্বীপ মূলত সেন্ট মার্টিন’স দ্বীপেরই একটি অংশ, তবে এটি জোয়ারের সময় আলাদা দ্বীপ হিসেবে দেখা দেয়। দ্বীপটি অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ।
সাদা বালির সৈকত: ছেড়া দ্বীপের সৈকতটি মুক্তার মতো সাদা বালিতে ঢাকা। সূর্যের আলো যখন বালির ওপর পড়ে, তখন এটি এক অনন্য ঝিলিক সৃষ্টি করে।
কোরাল পাথর: দ্বীপটি তার জীবন্ত ও মৃত প্রবাল পাথরের জন্য বিখ্যাত। এখানে আপনি বিভিন্ন প্রজাতির কোরাল দেখতে পাবেন।
প্রকৃতির নীরবতা: ছেড়া দ্বীপে কোনো জনবসতি নেই, ফলে এখানে প্রকৃতির নীরবতা পুরোপুরি উপভোগ করা যায়।
সাগরের নীল জলরাশি: দ্বীপটি ঘিরে থাকা পানির স্বচ্ছতা এবং গাঢ় নীল রঙ পর্যটকদের মুগ্ধ করে।
ডাইভিং ও স্নোরকেলিং: এখানে ডাইভিং ও স্নোরকেলিংয়ের মাধ্যমে সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য উপভোগ করা সম্ভব। কক্সবাজার থেকে শামলাপুর সমুদ্র সৈকত যাওয়ার উপায় জানুন।
ছেড়া দ্বীপে থাকা ও খাওয়া:
ছেড়া দ্বীপে কোনো স্থায়ী আবাসন বা রেস্তোরাঁ নেই। তাই আপনি দিনের বেলায় এখানে ভ্রমণ করে সেন্ট মার্টিন’স দ্বীপে ফিরে যেতে পারেন। সেন্ট মার্টিন’সে বিভিন্ন মানের হোটেল ও রিসোর্ট রয়েছে, যেমন:
- নীল দিগন্ত রিসোর্ট
- সেন্ট মার্টিন’স রিসোর্ট
- ব্লু মেরিন রিসোর্ট
খাবারের জন্য সেন্ট মার্টিন’স দ্বীপে বিভিন্ন রেস্তোরাঁ আছে, যেখানে তাজা সামুদ্রিক মাছ, লবস্টার, চিংড়ি, এবং কাঁকড়ার মতো খাবার পাওয়া যায়।
ছেড়া দ্বীপের ভ্রমণের জন্য প্রয়োজনীয় টিপস:
- পরিবেশ রক্ষার জন্য দ্বীপে প্লাস্টিকের ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
- সাঁতার কাটার সময় সতর্ক থাকুন, কারণ দ্বীপের কিছু জায়গায় স্রোত বেশ শক্তিশালী।
- নিজস্ব পানীয় জল ও হালকা খাবার সঙ্গে নিয়ে যান।
- দ্বীপ থেকে কিছু সংগ্রহ করা বা প্রবাল ভাঙা থেকে বিরত থাকুন।
- স্পিডবোট বা ট্রলারের সময়সূচি সম্পর্কে আগে থেকেই জেনে নিন।
ছেড়া দ্বীপ ভ্রমণের নিরাপত্তা:
ছেড়া দ্বীপে কোনো জনবসতি না থাকায় এটি অনেকটাই নির্জন। তাই দলবদ্ধভাবে ভ্রমণ করা নিরাপদ। মোবাইল নেটওয়ার্ক দুর্বল হতে পারে, তাই জরুরি যোগাযোগের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা রাখুন।
আমাদের শেষ কথা:
ছেড়া দ্বীপ প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এক স্বর্গরাজ্য। এর সৌন্দর্য ও শান্ত পরিবেশ আপনাকে দেবে এক ভিন্ন অভিজ্ঞতা। তবে ভ্রমণের সময় পরিবেশ রক্ষায় সচেতন থাকুন এবং স্থানীয় নিয়ম-কানুন মেনে চলুন। এই ছোট্ট দ্বীপটি আপনাকে স্মৃতিতে ভরপুর একটি দিন উপহার দেবে। পাঠক আশা করি সেন্টমার্টিন থেকে ছেড়া দ্বীপে যাওয়ার উপায় এই লেখার মাধ্যমে জানতে পেরেছেন।