সেন্টমার্টিন বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ। এর আয়তন ছোট হলেও এর সৌন্দর্য অপরিসীম। চারপাশে নীল জলরাশি আর সূর্যের সোনালি আলো যখন প্রবালের ওপর পড়ে, তখন পুরো দ্বীপ যেন এক স্বপ্নময় রূপ নেয়। দ্বীপে পাওয়া যায় বিভিন্ন ধরনের প্রবাল, মাছ এবং সামুদ্রিক প্রাণী। শীত মৌসুমে প্রচুর পর্যটক এখানে ভিড় জমান। ভ্রমণকারীরা সাধারণত কক্সবাজার বা টেকনাফ থেকে জাহাজে চড়ে সেন্টমার্টিন পৌঁছান। সেন্টমার্টিনে থাকার জন্য বেশ কিছু রিসোর্ট এবং গেস্টহাউস রয়েছে। তবে রাতের আকাশে তারার মেলা দেখার অভিজ্ঞতা এখানে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য। দ্বীপের নির্জনতা এবং প্রকৃতির সান্নিধ্য মানুষকে শহুরে জীবনের ব্যস্ততা থেকে মুক্তি দেয়। সেন্টমার্টিন ও ছেড়া দ্বীপের সৌন্দর্য নিচে আলোচনা করা হলো।
সেন্টমার্টিন ও ছেড়া দ্বীপের সৌন্দর্য:
সেন্টমার্টিন ও ছেড়া দ্বীপের সৌন্দর্য বলে শেষ করা যাবে না। এই দুটি দ্বীপ প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের দুই রত্ন। বাংলাদেশের পর্যটনের মানচিত্রে সেন্টমার্টিন এবং ছেড়া দ্বীপ দুইটি অনন্য রত্ন। বঙ্গোপসাগরের বুকে ছোট্ট দুটি দ্বীপ, যেখানে প্রকৃতি তার অফুরন্ত সৌন্দর্য উজাড় করে দিয়েছে। প্রতিটি ভ্রমণপিপাসু মানুষের হৃদয়ে চিরস্থায়ী স্মৃতি হয়ে থাকার মতো এক গন্তব্য। সেন্টমার্টিন থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ছেড়া দ্বীপ, যা আরও নির্জন এবং প্রাকৃতিকভাবে অনন্য। সেন্টমার্টিন থেকে নৌকায় বা ট্রলারে চেপে এখানে আসা যায়। ছেড়া দ্বীপে পর্যটকের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম থাকায় এটি আরও শান্ত ও নির্মল। এখানে দেখা মেলে দৃষ্টিনন্দন প্রবাল, সামুদ্রিক শামুক, এবং ছোট ছোট গাছপালা। দ্বীপটি মূলত সেন্টমার্টিনের একটি অংশ, যা ভাটার সময় বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ফলে এটি স্বাভাবিক দ্বীপের মতো অনুভূতি দেয়। ছেড়া দ্বীপের সৈকত অত্যন্ত পরিষ্কার এবং নির্জন। যারা প্রকৃতির কাছাকাছি যেতে চান এবং নিরিবিলি সময় কাটাতে চান, তাদের জন্য এটি আদর্শ।
সেন্টমার্টিন ও ছেড়া দ্বীপ বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ:
সেন্টমার্টিন বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ, যা স্থানীয়ভাবে “নারিকেল জিঞ্জিরা” নামেও পরিচিত। এই নামের পেছনে কারণ হলো দ্বীপের চারপাশে নারিকেল গাছের সমারোহ। প্রায় ৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দ্বীপটি ভাটার সময় আরো ছোট হয়ে আসে। দ্বীপটি সমুদ্রতল থেকে মাত্র কয়েক মিটার উঁচু এবং এখানকার সমুদ্রের পানি এতটাই স্বচ্ছ যে নীচে থাকা প্রবাল দেখা যায়।
সেন্টমার্টিন ও ছেড়া দ্বীপের বিশেষত্ব:
- প্রবাল ও সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য:
সেন্টমার্টিন প্রবাল, সামুদ্রিক মাছ, এবং অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণীতে ভরপুর। পর্যটকেরা স্কুবা ডাইভিং বা স্নরকেলিংয়ের মাধ্যমে সমুদ্রের নিচের বিস্ময়কর জগৎ উপভোগ করতে পারেন। - সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত:
সেন্টমার্টিনের সৈকত থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখার অভিজ্ঞতা সত্যিই মনোমুগ্ধকর। বিশেষত, সূর্যাস্তের সময় সমুদ্রের পানির ওপর পড়া সোনালি আভা এক মায়াবী দৃশ্য তৈরি করে। - রাতের তারাভরা আকাশ:
শহরের কোলাহল থেকে দূরে, সেন্টমার্টিনে রাতের আকাশ একেবারে পরিষ্কার। আকাশে অসংখ্য তারা জ্বলজ্বল করে, যা এখানে ভ্রমণের অন্যতম আকর্ষণ।
ছেড়া দ্বীপ যেন নির্জনতার স্বর্গ রাজ্য:
সেন্টমার্টিন থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ছেড়া দ্বীপ। এটি মূলত সেন্টমার্টিনের একটি অংশ, যা ভাটার সময় বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ছেড়া দ্বীপে যাওয়ার জন্য ট্রলার, স্পিডবোট, বা ছোট নৌকা ব্যবহার করা হয়। সেন্টমার্টিন ও ছেড়া দ্বীপ একসঙ্গে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অনন্য উদাহরণ। সাগরের গর্জন, নীল আকাশ, এবং নির্জন পরিবেশ মানুষের মনকে প্রশান্তি এনে দেয়। যারা জীবনে অন্তত একবার প্রকৃতির প্রকৃত সৌন্দর্য উপভোগ করতে চান, তাদের জন্য এই দ্বীপ দুটি হতে পারে এক অমূল্য অভিজ্ঞতা।
ছেড়া দ্বীপের কিছু বৈশিষ্ট্য:
- অপরূপ সৌন্দর্য:
ছেড়া দ্বীপ তার পরিষ্কার নীল জলরাশি, সাদা বালির সৈকত, এবং দৃষ্টিনন্দন প্রবালের জন্য বিখ্যাত। এখানে পর্যটকদের সংখ্যা কম থাকায় নির্জনতার স্বাদ নিতে চাইলে এটি আদর্শ। - প্রকৃতির একান্ত সান্নিধ্য:
এখানে কোনো জনবসতি নেই, যা দ্বীপটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে। কোলাহলহীন পরিবেশ প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য একান্ত শান্তি বয়ে আনে। - জীববৈচিত্র্য:
ছেড়া দ্বীপে বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক শামুক, ঝিনুক এবং ছোট ছোট মাছ দেখা যায়। দ্বীপের প্রবালসমূহ পর্যটকদের কাছে এক বিশেষ আকর্ষণ।
সেন্টমার্টিন ও ছেড়া দ্বীপে কীভাবে যাবেন?
সেন্টমার্টিনে যেতে হলে কক্সবাজার বা টেকনাফ থেকে জাহাজ বা স্পিডবোট ব্যবহার করতে হয়। টেকনাফ থেকে প্রতিদিন জাহাজ ছাড়ে, যা সকাল ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে সেন্টমার্টিন পৌঁছায়। সেখান থেকে ছেড়া দ্বীপে যেতে হলে ভাড়া করা নৌকা ব্যবহার করতে হয়।
সেন্টমার্টিন ও ছেড়া দ্বীপের থাকার ব্যবস্থা: সেন্টমার্টিনে বিভিন্ন ধরনের হোটেল, রিসোর্ট এবং গেস্টহাউস রয়েছে। পাশাপাশি কিছু জায়গায় তাঁবুতে থাকার সুযোগও মেলে। পর্যটকেরা যদি প্রকৃতির আরো কাছাকাছি থাকতে চান, তবে তাঁবু ক্যাম্পিং একটি দারুণ অভিজ্ঞতা হতে পারে।
সেন্টমার্টিন ও ছেড়া দ্বীপের খাদ্য: সেন্টমার্টিন এবং ছেড়া দ্বীপে তাজা সামুদ্রিক খাবারের অভিজ্ঞতা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। কাঁকড়া, চিংড়ি, মাছ, এবং বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক খাবারের মেন্যু ভ্রমণকে আরো রোমাঞ্চকর করে তোলে।
সেন্টমার্টিন ও ছেড়া দ্বীপের পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব: দ্বীপগুলোর পরিবেশ রক্ষা করা আমাদের সবার দায়িত্ব। অতিরিক্ত পর্যটন এবং প্লাস্টিক বর্জ্যের কারণে পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। তাই পর্যটকদের উচিত সেখানে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা এবং স্থানীয় পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সচেতন হওয়া। শামলাপুর সমুদ্র সৈকত সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন।
আমাদের শেষ কথা:
সেন্টমার্টিন ও ছেড়া দ্বীপের সৌন্দর্য প্রকৃতির এক অনবদ্য সৃষ্টি। এটি শুধু ভ্রমণের জন্য নয়, বরং মনের প্রশান্তি ও প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করার এক দারুণ জায়গা। সাগরের ঢেউয়ের গান, প্রবালের সৌন্দর্য এবং নির্জনতার মাঝে হারিয়ে যেতে চাইলে এই দ্বীপ দুটি হতে পারে আপনার পরবর্তী গন্তব্য। “প্রকৃতি যেখানে কথা বলে, সেখানে সেন্টমার্টিন ও ছেড়া দ্বীপ এক অনবদ্য কাব্য।”
Pingback: চট্টগ্রাম থেকে বান্দরবন যাওয়ার উপায় ভাড়া ভ্রমন গাইড দেখুন
Pingback: টেকনাফ সমুদ্র সৈকত ভ্রমণ যেন একটি স্বর্গীয় গন্তব্য