ভূমিকা
বাংলার বুকে জন্মগ্রহণকারী এক মহান নেতা, যিনি দীর্ঘ সংগ্রামের মাধ্যমে আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি ছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন সাহসী, দানশীল ও ন্যায়পরায়ণ। তাই তাকে সকলেই ‘বাংলার খোকা’ বলে ডাকতেন। আজকে পাঠক নিয়ে এসেছি বাংলার খোকা চতুর্থ শ্রেণী অনুচ্ছেদ ।
বঙ্গবন্ধুর জন্ম ও শৈশব
১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন শেখ মুজিবুর রহমান। তার পিতা ছিলেন শেখ লুৎফর রহমান ও মাতা ছিলেন সায়রা খাতুন। তিনি ছিলেন তিন ভাই-বোনের মধ্যে সবচেয়ে বড়। ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন দুরন্তপনায় ভরা। গ্রামের ছেলেদের সাথে খেলাধুলা, সাঁতার কাটা, গান গাওয়া, কবিতা আবৃত্তি করা ছিল তার প্রিয় কাজ। তিনি ছিলেন অত্যন্ত বুদ্ধিমান ও মেধাবী। স্কুলে পড়াশোনায় তিনি ছিলেন সেরা।
বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা ও রাজনৈতিক জীবন
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করার পর তিনি যোগদান করেন ছাত্রলীগে। দ্রুতই তিনি রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন এবং ১৯৫৩ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন। ভাষা আন্দোলন, ছয় দফা আন্দোলন, এবং আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।
ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি ছিলেন ভাষা আন্দোলন সংগ্রাম পরিষদের একজন সক্রিয় সদস্য। ১৯৭১ সালে, পাকিস্তানের অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান তিনি। মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক হিসেবে তিনি বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। তার ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ বাঙালি জাতিকে অনুপ্রাণিত করে স্বাধীনতার যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে। (চতুর্থ শ্রেণির প্রথম প্রান্তিক পরীক্ষার সাজেশন এর জন্য এখানে ক্লিক করুন)
বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবন
ছাত্রজীবনেই তিনি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। তিনি ছিলেন ছাত্রলীগের একজন সক্রিয় কর্মী। ভাষা আন্দোলনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। ১৯৫২ সালে তিনি আওয়ামী লীগের সদস্য হন। ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলনে তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক।
বঙ্গবন্ধুর মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা
১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনী বাঙালিদের উপর নির্যাতন চালালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ মার্চ গণবক্তৃতা দেন। এই বক্তৃতায় তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনী তাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে নিক্ষেপ করে। কারাগারে থাকাকালীন তিনি মুক্তিযুদ্ধের দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন। চতুর্থ শ্রেনির সকল ইংরেজী প্যারাগ্রাফ এর জন্য পাঠক এখানে ক্লিক করুন।
স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি
দীর্ঘ ৯ মাসের যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসেন। তিনি বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হন। দেশের পুনর্গঠন ও উন্নয়নে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি জাতীয় সংসদ ভবন, জাতীয় স্মৃতিসৌধ,বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার এবং রমনা পার্কের মতো বহু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নির্মাণ শুরু করেন। । চতুর্থ শ্রেনির শিক্ষার্থীদের পত্র লেখার নিয়ম দেখুন। বাংলার খোকা চতুর্থ শ্রেণী অনুচ্ছেদ।
বঙ্গবন্ধুর কর্মজীবন ও অবদান
রাষ্ট্রপতি হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের পুনর্গঠনের কাজ শুরু করেন। তিনি দেশের অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, শিল্প প্রভৃতি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তিনি ‘মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ’ জাতীয় স্মৃতিসৌধ, ‘বাংলাদেশ শিশু একাডেমী’, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি’ ‘শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার’ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ‘বাংলাদেশ বেতার’ ও ‘বাংলাদেশ টেলিভিশন’ স্থাপন করেন।
বঙ্গবন্ধুর নীতি:
বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় নীতি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নীতি ছিল বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন, সার্বভৌম, গণতান্ত্রিক, সমাজতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলা। তার নীতির মূল ভিত্তি ছিল ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ’ ‘সমাজতন্ত্র’ ‘গণতন্ত্র’ ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ এবং ‘শোষণমুক্ত সমাজ’ প্রতিষ্ঠা। বাংলার খোকা চতুর্থ শ্রেণী অনুচ্ছেদ ।
বঙ্গবন্ধুর নীতির মূল দিকগুলি
* **জাতীয়তাবাদ:** বঙ্গবন্ধু ছিলেন একজন জাতীয়তাবাদী নেতা। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, বাঙালি জাতি একটি স্বতন্ত্র জাতি এবং তাদের নিজস্ব রাষ্ট্র থাকা উচিত। তিনি ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ’ এর নীতির ভিত্তিতে বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন।
* **সমাজতন্ত্র:** বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস করতেন যে, সমাজতন্ত্রই একমাত্র নীতি যা একটি শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে পারে। তিনি ‘সমাজতন্ত্র’ এর নীতির ভিত্তিতে দেশের অর্থনীতির পুনর্গঠন করেন।
* **গণতন্ত্র:** বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস করতেন যে, গণতন্ত্রই একমাত্র নীতি যা জনগণের অধিকার রক্ষা করতে পারে। তিনি ‘গণতন্ত্র’ এর নীতির ভিত্তিতে দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেন।
* **ধর্মনিরপেক্ষতা:** বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস করতেন যে, ধর্মনিরপেক্ষতাই একমাত্র নীতি যা সকল ধর্মের মানুষের সমান অধিকার রক্ষা করতে পারে। তিনি ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ এর নীতির ভিত্তিতে বাংলাদেশকে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন।
* **শোষণমুক্ত সমাজ:** বঙ্গবন্ধুর নীতি ছিল একটি শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, সকল মানুষের সমান অধিকার এবং সুযোগ থাকা উচিত। বাংলার খোকা চতুর্থ শ্রেণী অনুচ্ছেদ ।
বঙ্গবন্ধুর নীতির প্রভাব
বঙ্গবন্ধুর নীতি বাংলাদেশের উপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলেছে। তার নীতির ভিত্তিতে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন, সার্বভৌম, গণতান্ত্রিক, সমাজতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে উঠেছে। তার নীতি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
কৃতিত্ব
* স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দীর্ঘদিন দেশ পরিচালনা করেন।
* মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও স্বাধীনতার স্থপতি হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন।
* দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
* বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নে কার্যকরী ভূমিকা পালন করেন।
মৃত্যু
* ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট সেনা সিপাহীদের বিদ্রোহে নিহত হন।
স্মরণীয়তা
* বাংলাদেশের জনগণের কাছে “জাতির জনক” হিসেবে সমাদৃত।
* তার জন্মদিন ও শাহাদতবার্ষিকী জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালিত হয়।
* তার নামে বিভিন্ন স্থাপনা, প্রতিষ্ঠান ও সড়কের নামকরণ করা হয়েছে।
উপসংহার
বাংলার খোকা শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন একজন দূরদর্শী নেতা, স্বাধীনতা সংগ্রামী ও বাংলাদেশের স্থপতি। তার কৃতিত্ব বাংলাদেশের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। বাংলার খোকা চতুর্থ শ্রেণী অনুচ্ছেদ সম্পর্কে ভালো ধারনা করতে পেরেছেন আশা করি।