৬ দফা গুলো কি কি ?

৬ দফা গুলো কি কি? ৬ দফা আন্দোলন ছিল বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক আন্দোলন। ১৯৬৬ সালের ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের লাহোরে অনুষ্ঠিত বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর এক সম্মেলনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে “৬ দফা দাবি” পেশ করেন।

৬ দফা দাবির মূল উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তানকে একটি ফেডারেল রাষ্ট্র হিসেবে গঠন করা, যেখানে পূর্ব পাকিস্তানকে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন দেওয়া হবে। প্রিয় পাঠক আজকে আমরা এই লেখার মাধ্যমে আপনাদেরকে জানাতে চেষ্টা করবো ৬ দফা গুলো কি কি ছিলো। আপনারা একটু সময় নিয়ে ধীরে ধীরে পড়বেন। আশা করি আনারা অনেক কিছু জানতে পারবেন।

৬ দফা গুলো কি কি?  

৬ দফা গুলো হলো:

১. পাকিস্তান হবে একটি ফেডারেল রাষ্ট্র, যার দুইটি অঙ্গরাজ্য থাকবে: পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিম পাকিস্তান।

২. প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের জন্য পৃথক সংবিধান থাকবে।

৩. প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের নিজস্ব মুদ্রা থাকবে।

৪. প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের নিজস্ব বাহিনী থাকবে।

৫. প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের নিজস্ব বিচারব্যবস্থা থাকবে।

৬. কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা শুধুমাত্র প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র এবং মুদ্রা বিষয়ে সীমাবদ্ধ থাকবে।

৬ দফা দাবির মূল উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তানকে একটি ফেডারেল রাষ্ট্র হিসেবে গঠন করা, যেখানে পূর্ব পাকিস্তানকে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন দেওয়া হবে। ৬ দফা দাবি পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হয়। এতে বাঙালি জাতির মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। এর ফলে ১৯৬৬ সালের ১৯ মার্চ থেকে ৭ জুন পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানে ৬ দফা আন্দোলন সংঘটিত হয়।  এই আন্দোলনে বাঙালিরা ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ করে। আন্দোলনের সময় পুলিশ ও ইপিআর-এর গুলিতে ১১ জন নিহত হয়। ৬ দফা আন্দোলন বাঙালি জাতির স্বাধীনতা আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।

এই আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালিরা তাদের স্বায়ত্তশাসন ও অধিকারের জন্য সংগ্রাম করার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে। ৬ দফা দাবি পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীকে বাঙালিদের অধিকারের দাবি মেনে নেওয়ার জন্য বাধ্য করে। 

৬ দফা আন্দোলনের পটভূমি 

৬ দফা আন্দোলনের পটভূমি নিম্নরূপ:

  • পাকিস্তানে বৈষম্যমূলক শাসন: পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী পশ্চিম পাকিস্তানের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করছিল। এতে বাঙালি জনগণের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ বৃদ্ধি পেতে থাকে।
  • ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয়: ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। এটি বাঙালি জাতির রাজনৈতিক ক্ষমতার বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক ছিল।
  • ১৯৬৫ সালের পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধ: ১৯৬৫ সালের পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধে পশ্চিম পাকিস্তান পরাজিত হয়। এতে পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বাঙালি জনগণের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ বৃদ্ধি পায়।
  • ১৯৬৬ সালের ছয় দফা দাবি: ১৯৬৬ সালের ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারি লাহোরে অনুষ্ঠিত বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর এক সম্মেলনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ৬ দফা দাবি পেশ করেন। 

৬ দফা দাবি প্রথম কে কোথায় উত্থাপন করেন?

৬ দফা দাবি প্রথম উত্থাপন করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরে অনুষ্ঠিত বিরোধী দলের সম্মেলনে তিনি পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ৬ দফা দাবি পেশ করেন।  এই দাবিগুলো ছিল পাকিস্তান রাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকার ও পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক সরকারের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টনের একটি নতুন কাঠামো। ১৯৬৬ সালের ৫-৬ ফেব্রুআরি বিরোধী দলের সম্মেলনে লাহোরে মোহাম্মদ আলীর বাসভবনে “৬ দফা” বঙ্গবন্ধু উত্থাপন করেন

৬ দফা দাবির প্রতিক্রিয়াঃ ৬ দফা দাবির প্রতিক্রিয়া ছিল দুইমুখী। পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী এবং পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি জনগণ এই দাবির প্রতি ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে।

পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর প্রতিক্রিয়া: পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী ৬ দফা দাবিকে বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে চিহ্নিত করে। তারা এই দাবিকে মেনে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিল না। পাকিস্তানের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খান ৬ দফা দাবিকে “পাকিস্তানের অস্তিত্বের জন্য হুমকি” হিসেবে ঘোষণা করেন।১৯৬৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি আইউব খান ছয়দফা প্রণয়ন কারীদের পাকিস্তানের শত্রু বলেন। 

পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি জনগণের প্রতিক্রিয়া: পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি জনগণ ৬ দফা দাবিকে তাদের স্বায়ত্তশাসন আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচনা করে। তারা এই দাবির পক্ষে ব্যাপকভাবে সমর্থন জানায়। ১৯৬৬ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধুর নামে ” আমাদের বাচার দাবি- ছয় দফা কর্মসূচি ” শিরোনামে পুস্তিকা বের হয়।।

৬ দফা দাবির তাৎপর্যঃ 

৬ দফা দাবির তাৎপর্য ছিল ব্যাপক ও গভীর। এই দাবির মাধ্যমে বাঙালি জাতির স্বায়ত্তশাসন আন্দোলনে একটি নতুন মাত্রা যোগ হয়। ৬ দফা দাবির ফলে বাঙালি জাতির মধ্যে স্বায়ত্তশাসন ও অধিকারের জন্য সংগ্রাম করার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি হয়। ৬ দফা দাবি পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীকে বাঙালিদের অধিকারের দাবি মেনে নেওয়ার জন্য বাধ্য করে।

৬ দফা দাবির তাৎপর্য নিম্নরূপ:

  • বাঙালি জাতির স্বায়ত্তশাসন আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক: ৬ দফা দাবি ছিল বাঙালি জাতির স্বায়ত্তশাসন আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এই দাবির মাধ্যমে বাঙালি জাতি তাদের স্বায়ত্তশাসন ও অধিকারের দাবিকে আরও জোরালোভাবে উত্থাপন করে।
  • পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীকে বাঙালিদের অধিকারের দাবি মেনে নেওয়ার জন্য বাধ্য করে: ৬ দফা দাবির প্রতি বাঙালি জনগণের ব্যাপক সমর্থনের ফলে পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীকে বাঙালিদের অধিকারের দাবি মেনে নেওয়ার জন্য বাধ্য হয়। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের ফলে আইয়ুব খান ক্ষমতাচ্যুত হন এবং নতুন সরকার ৬ দফা দাবির ভিত্তিতে একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন করে।
  • ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম প্রেক্ষাপট তৈরি করে: ৬ দফা দাবির মাধ্যমে বাঙালি জাতি তাদের স্বায়ত্তশাসন ও অধিকারের দাবির জন্য সংগ্রাম করার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে। ৬ দফা দাবির ভিত্তিতেই ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয় এবং বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে।

৬ দফা দাবি বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ হিসেবে পরিচিত। এই দাবির ভিত্তিতেই বাঙালি জাতি তাদের স্বাধীনতা অর্জন করে। ৬ দফা দাবির তাৎপর্য বাংলাদেশের ইতিহাসে চিরকাল অমর হয়ে থাকবে। 

৬ দফা আন্দোলনের ফলাফল:

পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের স্বায়ত্তশাসন দাবির প্রতি আরও সংবেদনশীল হয়ে ওঠে: ৬ দফা আন্দোলনের ফলে পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের স্বায়ত্তশাসন দাবির প্রতি আরও সংবেদনশীল হয়ে ওঠে। এই আন্দোলনের ফলে তারা বুঝতে পারে যে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিরা স্বায়ত্তশাসন অর্জনের জন্য আন্দোলন করতে প্রস্তুত। পূর্ব পাকিস্তানে গণতন্ত্র ও স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার আন্দোলন আরও বেগবান হয়: ৬ দফা আন্দোলনের ফলে পূর্ব পাকিস্তানে গণতন্ত্র ও স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার আন্দোলন আরও বেগবান হয়।

এই আন্দোলনের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিরা বুঝতে পারে যে গণতন্ত্র ও স্বায়ত্তশাসন অর্জনের জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করা প্রয়োজন। পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিরা স্বাধীনতা অর্জনের জন্য আরও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়: ৬ দফা আন্দোলনের ফলে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিরা স্বাধীনতা অর্জনের জন্য আরও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়। এই আন্দোলনের মাধ্যমে তারা বুঝতে পারে যে স্বাধীনতা অর্জন ছাড়া তাদের স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। ৬ দফা আন্দোলন ছিল বাঙালি জাতির ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালি জাতি তাদের স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষাকে আরও জোরদার করে এবং ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনে সক্ষম হয়।

ছয় দফা দাবির গুরুত্বঃ

ছয় দফা দাবির গুরুত্ব নিম্নরূপ:

  • ছয় দফা দাবি পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল।
  • ছয় দফা দাবি পূর্ব পাকিস্তানে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে।
  • ছয় দফা দাবির ভিত্তিতে ১৯৬৬ সালের ৭ জুন সারা পূর্ব পাকিস্তানে ছয় দফা আন্দোলন শুরু হয়।
  • ছয় দফা আন্দোলনের ফলে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিরা স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য আরও বেশি ঐক্যবদ্ধ হয়।
  • ছয় দফা ছিল ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি।

১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন ছিল পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এই আন্দোলনের ফলে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিরা স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য আরও বেশি ঐক্যবদ্ধ হয় এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনে সক্ষম হয়।

৬ দফা আন্দোলনের গুরুত্ব নিম্নরূপ:

পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষাকে আরও জোরদার করে: ৬ দফা আন্দোলন পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের মধ্যে স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষাকে আরও জোরদার করে। ৬ দফা দাবিগুলো ছিল পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থার প্রস্তাব। এই দাবিগুলোর মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিরা বুঝতে পারে যে তারা পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর অধীনে স্বায়ত্তশাসন অর্জন করতে পারবে না। পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের মধ্যে ঐক্য ও সংহতির বীজ বপন করে: ৬ দফা আন্দোলন পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের মধ্যে ঐক্য ও সংহতির বীজ বপন করে। ৬ দফা আন্দোলনের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন শ্রেণি, পেশা ও ধর্মের মানুষ একত্রিত হয় এবং স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হিসেবে কাজ করে: ৬ দফা আন্দোলন ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। ৬ দফা আন্দোলনের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিরা স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য কতটা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ তা প্রমাণ করে। এই আন্দোলনের ফলে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিরা স্বাধীনতা অর্জনের জন্য আরও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়। 

পরিশেষেঃ 

৬ দফা আন্দোলন ছিল বাঙালি জাতির ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালি জাতি তাদের স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষাকে আরও জোরদার করে এবং ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনে সক্ষম হয়। পাঠক এই আর্টিকেল থেকে আশা করি আপনারা ৬ দফা গুলো কি কি ছিলো ভালো করে জানতে পেরেছেন।

৬ দফা গুলো কি কি ছিলো এটা নিয়ে কিছু প্রশ্ন নিচে আলোচনা করা হলোঃ

প্রশ্নঃ ৬ দফা দিবস কবে? 

উত্তরঃ ৬ দফা দিবস প্রতি বছর ৭ জুন পালিত হয়

প্রশ্নঃ ৬ দফা দাবি কে প্রথম উত্থাপন করেন?

উত্তরঃ ৬ দফা দাবি প্রথম উত্থাপন করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরে অনুষ্ঠিত বিরোধী দলের সম্মেলনে তিনি পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ৬ দফা দাবি পেশ করেন।

প্রশ্নঃ ৬ দফা দিবস ৭ জুন কেন? 

উত্তরঃ ৬ দফা দিবস ৭ জুন কেন, তার কারণ হল ১৯৬৬ সালের ৭ জুন শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে ৬ দফা দাবির পক্ষে দেশব্যাপী তীব্র গণ-আন্দোলনের সূচনা হয়। ৭ জুন ১৯৬৬ সালে, শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ঢাকায় একটি বিশাল জনসভা করে।

এই জনসভায় ৬ দফা দাবি ঘোষণা করা হয়। ৭ জুন ১৯৬৬ সালে, আওয়ামী লীগের ডাকে দেশব্যাপী হরতাল পালিত হয়। এই হরতালে পুলিশ ও ইপিআরের গুলিতে মনু মিয়া, শফিক, শামসুল হক, মুজিবুল হকসহ মোট ১১ জন বাঙালি নিহত হন।

প্রশ্নঃ ৬ দফা গুলো কি কি? 

উত্তরঃ ৬ দফা গুলো হলো:

১. পাকিস্তান হবে একটি ফেডারেল রাষ্ট্র, যার দুইটি অঙ্গরাজ্য থাকবে: পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিম পাকিস্তান।

২. প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের জন্য পৃথক সংবিধান থাকবে।

৩. প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের নিজস্ব মুদ্রা থাকবে।

৪. প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের নিজস্ব বাহিনী থাকবে।

৫. প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের নিজস্ব বিচারব্যবস্থা থাকবে।

৬. কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা শুধুমাত্র প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র এবং মুদ্রা বিষয়ে সীমাবদ্ধ থাকবে।

প্রশ্নঃ ৬ দফার প্রথম দফাটি কি সম্পর্কিত ছিল? 

উত্তরঃ ৬ দফার প্রথম দফাটি পাকিস্তানের রাষ্ট্রব্যবস্থার সাথে সম্পর্কিত ছিল। এই দফায় বলা হয়েছিল যে, পাকিস্তান একটি ফেডারেল রাষ্ট্র হবে, যার দুইটি অঙ্গরাজ্য থাকবে: পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিম পাকিস্তান। এই দুটি অঙ্গরাজ্যকে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন দেওয়া হবে।

প্রশ্নঃ ছয় দফা দাবির গুরুত্ব আলোচনা কর। 

উত্তরঃ ছয় দফা দাবির গুরুত্ব নিম্নরূপ:

  • ছয় দফা দাবি পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল।
  • ছয় দফা দাবি পূর্ব পাকিস্তানে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে।
  • ছয় দফা দাবির ভিত্তিতে ১৯৬৬ সালের ৭ জুন সারা পূর্ব পাকিস্তানে ছয় দফা আন্দোলন শুরু হয়।
  • ছয় দফা আন্দোলনের ফলে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিরা স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য আরও বেশি ঐক্যবদ্ধ হয়।
  • ছয় দফা ছিল ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। 

প্রশ্নঃ ৬ দফা কর্মসূচিকে কেন বাঙালির ম্যাগনাকার্টা বলা হয়?

উত্তরঃ ম্যাগনাকার্টা হল ইংল্যান্ডের একটি ঐতিহাসিক দলিল, যা ১২১৫ সালের ৩০ নভেম্বর ইংল্যান্ডের রাজা জন দ্বারা স্বাক্ষরিত হয়। এই দলিলের মাধ্যমে ইংল্যান্ডের রাজা তার জনগণের কিছু অধিকার স্বীকার করে নেন। ৬ দফা কর্মসূচির সাথে ম্যাগনাকার্টারের মিল রয়েছে কারণ উভয় ক্ষেত্রেই একটি শোষিত জনগোষ্ঠী তাদের অধিকারের দাবি করে।

এই দাবিগুলো পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। ৬ দফা আন্দোলনের ফলে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিরা স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য আরও বেশি ঐক্যবদ্ধ হয়। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীনতা লাভ করে। ৬ দফা ছিল এই স্বাধীনতার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। তাই, ৬ দফা কর্মসূচিকে বাঙালির ম্যাগনাকার্টা বলা হয়।

1 thought on “৬ দফা গুলো কি কি ?”

  1. ইতিহাসের অনেক কিছু জানলাম আপনার সাইট থেকে। এগিয়ে যান সমানে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top